পূর্ব ইউক্রেনের ডনেৎস্ক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখলের চেষ্টা করছে রুশ সেনাবাহিনী! ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ডনেৎস্ক অঞ্চলের কুচেরিভ ইয়ার গ্রামের আশপাশে রুশ বাহিনী আচমকা হামলা চালিয়েছে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ডনেৎস্ক অঞ্চলে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে অভিযান শুরু করেছিল রাশিয়া। সেই অভিযানের অংশ হিসাবেই এই অগ্রগতি। উল্লেখ্য, আগামী ১৫ অগস্ট আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের আগে রুশ সেনাবাহিনীর এই হামলা কেন? উঠছে প্রশ্ন। অনেকের মতে, রাশিয়ার জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য ইউক্রেনের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল হতে পারে।
মঙ্গলবার ইউক্রেনের ‘ডিপস্টেট যুদ্ধ মানচিত্রে’ দেখা গিয়েছে, রুশ বাহিনী সাম্প্রতিক কালে দুই প্রান্তে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটার উত্তরে অগ্রসর হয়েছে। হাল আমলে এই অগ্রগতি সবচেয়ে নাটকীয়। ডিপস্টেট জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় শহর কোস্টিয়ান্টিনিভকা এবং পোকরোভস্কের পরিধির তিনটি গ্রামের অনেক কাছে পৌঁছে গিয়েছে রুশ সেনাবাহিনী। ডিপস্টেটের বিবৃতি অনুযায়ী, ‘‘পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। শত্রুরা প্রতিরক্ষায় ফাঁক খুঁজে পেয়ে ইউক্রেনের আরও গভীরে প্রবেশ করছে। দ্রুত আরও অগ্রগতির জন্য ওই এলাকায় আরও বাহিনী জড়ো করার কাজ করছে শত্রুরা।’’
আলাস্কার বৈঠক নিয়ে সোমবারই নিজের আশার কথা প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। তিনি বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমি ভ্লাদিমির পুতিনকে বলতে যাচ্ছি যে, আমাদের এই যুদ্ধ শেষ করতে হবে। উনিও আমার সঙ্গে কোনও সংঘাতে জড়াতে যাচ্ছেন না।’’ ট্রাম্প এ-ও জানান, পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর জ়েলেনস্কি এবং অন্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন। বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, পুতিন ইতিমধ্যেই ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, তিনি চান ডনেৎস্ক অঞ্চলের যে অংশ রাশিয়ার দখলে নেই, তা যেন হস্তান্তর করে ইউক্রেন। যদিও এ ব্যাপারে মস্কোর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
রাশিয়ার এই হামলা কৌশলগত বলে মনে করেন ইউক্রনীয় সেনার এক প্রাক্তন কর্তা। তাতারিগামি নামে ওই কর্তা জানিয়েছেন, ২০১৪ এবং ২০১৫ উভয় ক্ষেত্রেই আলোচনার আগে এই ভাবে রাশিয়া বড় ধরনের হামলা চালিয়েছিল। আলোচনার টেবিলে লাভ আদায় করার এ এক কৌশল রাশিয়ার।
মঙ্গলবার ইউক্রেনীয় সেনার তরফে জানানো হয়েছে, সুমি অঞ্চলের দু’টি গ্রাম তারা পুনরুদ্ধার করেছে। ইউক্রেনের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জেনারেল ওলেকজ়ন্ডার সিরস্কি রুশ ফৌজের অগ্রগতির কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘‘খুব কঠিন, তবুও আমরা শত্রুদের আটকে রেখেছি।’’ কী ভাবে ইউক্রেনের আরও ভিতরে ঢুকে পড়ল রুশ সেনা? সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেনীয় সেনার অভাবের কারণেই এই অগ্রগতি। অর্থাৎ, রুশ হামলা ঠেকানোর মতো পর্যাপ্ত সেনার অভাব রয়েছে ইউক্রেনের। ক্রেমলিনের প্রাক্তন উপদেষ্টা সের্গেই মার্কভের কথায়, ‘‘এই অগ্রগতি আলোচনার সময় পুতিন এবং ট্রাম্পের জন্য একটি বড় উপহার!’’আলাস্কার বৈঠকের আগেই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের শান্তিচুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে জমি ছাড়ার প্রসঙ্গটি। সে ক্ষেত্রে রাশিয়াকে কিছু এলাকা ছেড়ে দেবে ইউক্রেন। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। শনিবার জ়েলেনস্কি স্পষ্ট করে দেন, এই প্রস্তাবে সায় নেই তাঁর। জ়েলেনস্কি আরও বলেন, ‘‘আমরা দেখতে পাচ্ছি রুশ সেনাবাহিনী যুদ্ধ শেষ করার কোনও প্রস্তুতি নিচ্ছে না। বরং তারা এমন কাজ করছে যা নতুন আক্রমণের দিকেই ইঙ্গিত দেয়।’’ এই পরিস্থিতিতে অনেকেই শুক্রবারের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে।