স্কুলের চার দেওয়ালের গণ্ডি ছেড়ে লাকড়ি বিক্রেতা অমরপুর থাকছড়ার দুই শিশু। বন জঙ্গল থেকে কাঠ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করছেন বছর এগার’র দুই ভাই। এই শিশুদের ভবিষ্যৎ নির্ণয়ে শিশু সুরক্ষা কমিশনের কোন পরিকল্পনা নেই।
শিশুশ্রম আমাদের রাজ্যের এক বড়সড় অভিশাপ। রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই এই ধরনের শিশুদের রাস্তার পাশে, অন্যের দোকানে কাজ করতে দেখা যায়। কেউ রক্সা চালায়, কেউ বা মিষ্টির দোকানে কেউ বা কোন ওয়ার্ক শপে বা মোদীর দোকানে শ্রম বিক্রি করছে। বিনিময়ে হয়ত সামান্য পারিশ্রমিক পাচ্ছে। পথ চলতি মানুষ আসা যাবার পথে তাদেরকে দেখলেও কেউ হয়ত তাদের কথা চিন্তা করেন না। কারোর হয়ত চিন্তা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না। অমরপুর মহকুমার থাকছড়ায় এমনই দুই শিশু লাকড়ি বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করছে।
এগার, বার বছরের দুই ভাই অজয় মুন্ডা ও বিষ্ণু মুন্ডা এক সময় থাকছড়া এস বি স্কুলে পড়াশোনা করত। এখন তাদের ভাগ্যে আর গুনগত শিক্ষা জুটছে না। মা- বাবা দুই জনই অসুস্থ। তাই সংসারের ঘানি টানতে হচ্ছে দুই ভাইকে। বই খাতার ব্যাগ ফেলে ঠেলারিক্সায় বন থেকে কুড়িয়ে আনা লাকড়ি নিয়ে বিভিন্ন বাজারে বাজারে বিক্রি করছে এই খুদে। সকাল থেকে বিকাল অব্দি বনে বনে লাকড়ি সংগ্রহ করে সন্ধ্যা হলেই সেই লাকড়ি অমরপুর বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে ওরা। অমরপুর মহকুমার থাকছড়া পঞ্চায়েতের মুন্ডা কলোনীর ওরা দুই ভাই।
সকালে অন্যান্য শিশুরা যখন বই খাতার ব্যাগ নিয়ে পরম আনন্দে স্কুলের অভিমুখে যাচ্ছে তখন খুদে দুই ভাই যাচ্ছে বনে কাঠ সংগ্রহ করতে। অন্যান্য শিশুরা যখন শিক্ষা গ্রহণ করে বাড়ী ফেরে তখন অজয় বিষ্ণু বন থেকে কাঠ নিয়ে আসে। রিক্সার প্যাডেল চেপে লাকড়ি নিয়ে বাজারের এপাশ থেকে অপাশে ঘুরে বেড়ায়। কোন
সহৃদয় ব্যক্তি যদি লাকড়ি ক্রয় করেন তবেই এদিন রাতে তাদের দুমুঠো ভাত কপালে জুটবে। আর যদি লাকড়ি বিক্রি না হয় তাহলে রাতে হয়ত তাদেরকে অভুক্তই থাকতে হচ্ছে।
লাকড়ি কাটা, রিক্সা চালাতে গিয়ে তাদের কঁচি পায়ে টান ধরেছে।দুপুরের কাঠফাটা রোদে তাদের শরীরে ক্লান্তি চলে আসে। এই সময় হয়ত খাবার দাবার সেরে অন্যান্য ছেলে মেয়েরা বিশ্রাম করে। কিন্তু তাদেরকে বনে লাকড়ি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। বিকালে অন্যান্য ছেলে মেয়েরা যখন মাঠে খেলা করে তখন লাকড়ি নিয়ে বাজার অভিমুখে যেতে হচ্ছে দুই শিশুকে। বাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ প্রায় সকলই তাদেরকে দেখেন। কিন্তু কেউ তাদের কথা এতটুকু ভাববার সময় নেই।
রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই এই ধরনের শিশু দেখা যায়।অত্যন্ত দুঃখের ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে তথাকথিত শিশু সুরক্ষা কমিশনের কর্তা ব্যক্তিদের এই শিশুদের চোখে পড়েনা। আর যদিও চোখে পড়ে থাকে তাহলে তারা হয়তবা দেখেও না দেখার ভান করে চলে যায়। যদিও তারা কালো চশমা পরিধান করেই চলাফেরা করেন। আর শীত তাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ্যে বসে শিশুদের কল্যাণের জন্য দিশা নির্ণয় করেন। ঘুমেরঘুরে তাদের অধিকাংশ সিদ্ধান্তই শিশুদের কল্যাণে আসেনা। তবু তারা এরাজ্যের তথা কথিত শিশু সুরক্ষার দায় দায়িত্ব পালন করে আসছেন।সব কিছু দেখেও নীরব দর্শক শ্রম দফতরের শীর্ষ কর্তারা। তবে থাক ছড়ার দুই শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্ণয়ে তাদের কোন সিদ্ধান্ত হবে কি না তা হয়ত সময়েই বলবে।