ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিনের নিষেধজ্ঞা পর সোমবার মধ্যরাত থেকে ইলিশ শিকারে পদ্মা-মেঘনায় নামবেন মৎস্যজীবরা। ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ ডিম ছাড়াকালীন সময়ে ইলিশ শিকার বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এসময়ে সাড়ে ৫ লাখ মৎস্যজীবী পরিবারকে সরকারের তরফে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও চোরাগোপ্তাভাবে মা ইলিশ শিকারে নামে অসাধু মৎস্যজীবীরা। মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের কঠিন পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে সুধীমহল। সরকারের তরফে বন্ধনকালীন সময়ে খাদ্য সহায়তা পাবার পরও যেসব মৎস্যজীবী চোরাই পথে ইলিশ শিকার করতে গিয়ে আটক হয়েছে, তাদের কঠিন শাস্তি দেখতে চায় সচেতনমহল।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং এশিয়ার অন্যতম ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন, প্রজনন সময়ে মা ইলিশ রক্ষায় গত ৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শুরু হয়। এবারের অভিযানে বিমানবাহিনীকে যুক্ত হয়। সমন্বনিত বাহিনীর উদ্যোগ মা ইলিশ সংরক্ষণ ছিলো বাংলাদেশের ইলিশ উৎপাদনকে আরও বাড়িয়ে দেওয়া। ড. আনিছুর রহমান বলেন, একটি মা ইলিশ সেওাতের বিপরীতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মা ইলিশ নদনদীতে চলে আসে ডিম ছাড়ার জন্য।
এই সময়টাতে নিরাপদে ডিম ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই সরকারের ২২ দিন ইলিশ শিকার বন্ধ রাখা যুগপোগী সিদ্ধান্ত। এই সময়টিতে মৎস্যজীবীদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকে সরকার। একটি মা ইলিশ কমপক্ষে ২০ লাখ ডিম ছাড়ে। গত বছর সাড়ে ৭ লক্ষ্য কেজি ডিম ছেড়ে যায়। এতে ৩৭ হাজার আটশ কোটি ইলিশ জন্ম নিয়েছে।
এবারের নিষেধাজ্ঞার সময়ে ২৪৩টি মোবাইল কোর্টে ৩৭৮ জন মৎস্যজীবীকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা আওতায় আনা হয়েছে ৮৬৮ জন মৎস্যজীবীকে । মুচলেকায় ছাড় দেওয়া হয়েছে ২৭৫ জনকে।এতো কিছুর পর পদ্মায় মা ইলিশ শিকারকালে মোবাইল কোর্ট মৎস্যজীবীদের আটক করে। সেখানে দেখা গিয়েছে প্রতিটি মা ইলিশের পেটভর্তি ডিম।
‘মা ইলিশ সংরক্ষণে ২২দিনের নিষেধাজ্ঞাকালীন ইলিশ শিকারের ঘটনায় ২২৯টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে ২২৬টি মামলা মৎস্য আইনে এবং তিনটি পুলিশের ওপর আক্রমণের। ২২ দিনের অভিযানে দুই হাজারেরও অধিক জেলে আটক হয়েছে। অভিযানকালে ১ হাজার ৪৫টি মাছ ধরার নৌকা ডুবিয়ে দিয়েছে নৌ-পুলিশ। ২০ দিনে দুই হাজারের বেশি মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার আটক করেছে নৌ-পুলিশ। অভিযানকালে নৌ-পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। জব্দ হওয়া ৩০ হাজার কেজি ইলিশ এতিমখানায় বিতরণ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।আটক ৪২৯টি ট্রলারের মধ্যে ৯০টি নৌ-পুলিশ আলামত হিসেবে আটক রেখেছে। ৮০ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার মিটার জব্দ করা জাল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত এসপি সাথী রানী শর্মা জানান, ‘ইলিশ সংরক্ষণে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নৌ-পুলিশ দেশের নদীগুলোতে কড়া পাহারায় ছিল। যারা আইন অমান্য করে ইলিশ ধরেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়া হয়েছে।ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকাকালে এ বছর ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৪টি জেলে পরিবারের জন্য ১১ হাজার ১১৮ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ সময় অন্যদেশের জেলেরা যাতে বাংলাদেশের জল সীমানায় মাছ ধরতে না পারে সেজন্য তৎপর ছিল কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী।ইলিশ সংরক্ষণে ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০’-এর অধীনে প্রণীত ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস, ১৯৮৫’ অনুযায়ী ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আইন অমান্যকারী কমপক্ষে ১ ও সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
ঢাকা ঋদ্ধিমানের রিপোর্ট