সেমিফাইনাল।
বিধানসভা ভোটের আগে পুরো ও নগর পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে এরাজ্যের সেমিফাইনালে । সেমিফিন্যালে যারা হারবেন তারা ফাইন্যালে তারা ফাইন্যালে ওয়াশ আউট – বিষয়টা এমন নয়। তবে সেমিফাইনালে জয়টা খুব ভালো হলে বিধানসভার ফাইন্যালে একটু এগিয়ে রাখা যায় বৈকি , যদি এই জয়টা শাসক দলের হয়। বিরোধী দল গুলোর ক্ষেত্রে জমি খুঁজে পাওয়ার প্রচেষ্টা । ফলাফল যদি কিছুটা ভাল হয় তাহলেই তাদের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এডভান্টেজ । যদিও রাজ্যের পুর ও নগর ভোটে এমন টা হওয়া এজাত্রায় জথেষ্ট কঠিন। কারণ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল নাচছে ঘোমটার নিচে খেমটা , আর অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো শক্তির বিচারে এখনো অপরীক্ষিত
সম্প্রতি অতীতে ত্রিপুরার বিধানসভা ও তার আগে পুরো নির্বাচনের গতিপ্রকৃতির নিরিখে বিশ্লেষিত এই প্রতিবেদন। বিগত ২০ বছরের ইতিহাসে রাজ্য বিধানসভায় ক্ষমতাশীল শাসক দল ই সাধারণত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে জয়লাভ করে এসেছে। মাঝে মাঝে পঞ্চায়েত স্তরে বা ভিলেজ কমিটি স্তরে কিংবা নগর পঞ্চায়েত লেভেলে যৎসামান্য এদিক ওদিক হতে পারে। তবে সাধারণভাবে ট্রেন্ডটা এমনই হয়ে চলেছে ত্রিপুরা রাজ্যে। পুরো পরিষদ অথবা পুরসভা কিংবা নগর পঞ্চায়েতে বিরোধীদের ভোট শেয়ার কিংবা আসন সংখ্যার ওপর নির্ভর করে বিধানসভা নির্বাচনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যায়। ১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বেশ কিছু উপনির্বাচন হয়েছিল। সেই সকল উপনির্বাচনে বিজেপি জয়লাভ করতে না পারলেও তাদের প্রাপ্ত ভোট শেয়ার থেকে বিধানসভা নির্বাচনে যে বিজেপি একটি বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে সে কথার আন্দাজ পাওয়া গিয়েছিল। সেই সকল উপনির্বাচন গুলো থেকে মানুষের মনোভাবের একটা আঁচ পাওয়া গিয়েছিল।
ঠিক তেমনি এবারের পুরো ও নগর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল থেকে আগামী দিনের ট্রেন্ড বুঝা যাবে। বিগত বিধানসভা নির্বাচনের আগের উপনির্বাচন গুলোতে রাজ্যের ক্ষেত্রে সেসময়কার প্রায় নবাগত বিজেপি সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিল। কিন্তু এবারের পুরো ও নগর পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল সিপিআইএম সর্বশক্তি নিয়োগ করছে কিনা সেই নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। তা নাহলে রাজ্যে এমন সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরী হয়নি যে সন্ত্রাস কে মোকাবেলা করে বিশালগড় , উদয়পুর সহ বেশ কিছু জায়গায় সিপিএম মনোনয়নপত্র পর্যন্ত দাখিল করতে পারেনি। আগরতলা পুরো নিগমের সাতটি ওয়ার্ড থেকেও সিপিএম প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নিল, অথচ সেখানে তৃণমূল তো প্রত্যাহার করেনি। আর সন্ত্রাসই যদি কারণ হয় তাহলে মাঝখানের ৫টা বছর বাদ দিলে টানা ৩৫ বছরের শাসকদল সিপিএম কি সেই সকল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ন্যুনতম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি? আসলে সবটাই অজুহাত। তৃণমূলের কাঁধে বন্দুক রেখে কিছুটা বৈতরণী পার হওয়া যায় কিনা তার কৌশল। তবে মেলার মাঠ পার্টি অফিস ভাঙচুরের সময় থেকে পুরো নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিরোধ করার নামমাত্র চেষ্টা না থাকায় সিপিএম সমর্থকদের মনোবল যে ভাঙবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই ভোটব্যাঙ্কের খানিকটা তৃণমূলে চলে যাবার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
আগরতলা পৌরনিগম সহ রাজ্যের পুরো ও নগর পঞ্চায়েত নির্বাচন হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে অ্যাসিড টেস্ট এর মত । CPIM এর হতাশাগ্রস্থ ভোটারদের ক্রিয়দংশ ও বিগত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে চলে যাওয়া ভোটের একটা অংশও যদি তৃণমূল বাগিয়ে নিতে পারে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বড় ড্রাইভ দিতে পারে তৃণমূল , অন্যথায় জাতীয় পার্টির স্বীকৃতি ধরে রাখার জন্য মাত্র 6 শতাংশ ভোটের জন্যই ঝাপাবে তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বাকি রইল কংগ্রেস। বিগত বিধানসভায় প্রাপ্ত ভোটই শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ধরে রাখতে পারবে কিনা সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। তবে সরকারে থাকার সুবাদে অবশ্যই ভাল অবস্থানে রয়েছে বিজেপি। বিগত পৌনে চার বছরের বিজেপি জোট সরকারের কাজকর্ম ভোটারদের বিবেচনায় তুলে ধরেছে বিজেপি । তেমনি গণতান্ত্রিক পরিবেশও চর্চায় রয়েছে ভোটারদের । সরকারে থাকায় প্রশাসন ও পরোক্ষ্য থাকছে শাসকদলের সাথে । মিছিল , মিটিং , বাড়ি বাড়ি প্রচার, স্কোয়াডিং , মাইকিং , প্রচার সজ্যা ইত্যাদিতে শাসক দল বিজেপি অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর চাইতে বহুগুন এগিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই যুব শক্তির আস্ফালন রয়েছে বিজেপির সাথে।
অনেক ক্ষেত্রেই বুথ রক্ষা করা কিংবা ভোট গুনে নিয়ে আসার মত কর্মীবাহিনীই বিরোধীদের কাছে নেই। এই সবকিছু মিলিয়ে শাসক দল বিজেপির অবস্থান বেশ শক্তপোক্ত। আগরতলা পুরনিগমের আসন সংখ্যা ও ভোট পার্সেন্টেজ সমগ্র রাজ্যে আগামী দিনের জন্য বিশেষ প্রভাব বিস্তার করবে। স্বাভাবিক ভোট হলে এক্ষেত্রে বিরোধীদল যদি 10 থেকে 13 টা আসন নিজেদের দখলে নিতে পারে তাহলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধীদের বাড়তি অক্সিজেন যোগাবে । অন্যথায় আগামী বিধানসভা নির্বাচনের দেওয়াল লিখন লেখা হয়ে যাবে এবারের পুরো ও নগর পঞ্চায়েত নির্বাচনেই । এভাবে বিশ্লেষিত হতে পারে এবারকার সেমিফাইনাল।