বিষ্ণুপুরিয়া। আদম সুমারীর হিসেবে সেই ব্রিটিশ আমলেই উত্থান বিষ্ণুপুরিয়া জাতিগোষ্ঠীর। মুখের কথা নয়, এর পুরো তথ্য রয়েছে বিষ্ণুপুরিয়া সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের কাছে। একই সঙ্গে এই জাতিকে সমাজের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে অবিরাম প্রয়াসে মগ্ন অল ইন্ডিয়া বিষ্ণুপুরিয়া সারথি সংস্থ্যা। জন গণনা অনুযায়ী ব্রিটিশদের সময় গিয়ারসন একটি তথ্য প্রকাশ করেছিলেন জার্নালে। এর মধ্যে বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছিলেন তিনি। এর মধ্যে ইন্ডো আরবিয়ান ভাষা ও রয়েছে। এই ভাষা গোষ্ঠীর লোকেরা আর্য জাতি হিসেবেই চিহ্নিত রয়েছে আজো। বর্তমানে ভারতবর্ষে ১২১টি ভাষা রয়েছে। যার মধ্যে গিয়ারসনের তথ্য অনুযায়ী চার নাম্বারেই রয়েছে বিষ্ণুপুরিয়া ভাষা। এরপর আবার ১৯৫১ সালে হয় জনগণনা। তাতে ও ছিল বিষ্ণুপুরিয়া জাতির স্পষ্টতা। একই ভাবে ১৯৬১, ১৯৭১ সালেও সেনসাসে ছিল এই জাতিগোষ্ঠীর লোকেদের উপস্থিতি। তবে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে ১৯৮১ সালের পর এই জাতিগোষ্ঠীর কোনো সরকারি স্বীকৃতিই নেই বলে আফসোস প্রকাশ করলেন বিষ্ণুপুরিয়া সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ও অল ইন্ডিয়া বিষ্ণুপুরিয়া সারথি সংস্থার প্রতিনিধিরা। আচমকা ভারতবর্ষের মধ্যে জায়গা পেয়ে গেল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী জাতিগোষ্ঠী। তবে আদতে জন গণনা অনুযায়ী এই জাতি গোষ্ঠীর কোনো নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। তথ্য রয়েছে যাবতীয় সব কিছুর বিষ্ণুপুরিয়া জাতিগোষ্ঠীর।
তবে অবাক করার মতো বিষয় হলো, বর্তমানে রাজ্যে কোথাও বিষ্ণুপুরিয়া জাতিগোষ্ঠীর কোনো সরকারি স্বীকৃতি নেই । উল্টো বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী কিংবা মনিপুরী মেইথেই এর জোরদার আধিক্য। এই নিয়ে বড়ই চিন্তিত বিষ্ণুপুরিয়া জাতি গোষ্ঠীর লোকেরা। এই নিয়ে একজন বিষ্ণুপুরিয়া জাতি গোষ্ঠীর লোক আফসোস প্রকাশ করলেন সরাসরি মিডিয়ার সামনে।
তিব্বত বার্মিজ গ্রূপ। এর মধ্যে ৬৫ টি ভাষা রয়েছে। যাতে ৩৫ নাম্বারে রয়েছে মনিপুরী জাতিগোষ্ঠী। তবে ব্রেকেটে একটি এস ও রয়েছে। সাউথ এশিয়ান ডিজিটেল লাইব্রেরিতে একটি বই রয়েছে। যার নাম ল্যাংগুইজস্টিক সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। এর ভলিউম নাম্বার ফাইভের পার্ট ওয়ানে ৪২৬ নাম্বার পেইজে স্পষ্ট ভাবে রয়েছে বিষ্ণুপুরিয়া জাতিগোষ্ঠী এবং মনিপুরী জাতিগোষ্ঠীর ভাষা গত পার্থক্য কতটা তার একটা ছোট্ট অংশ আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো। বিষ্ণুপুরিয়া জাতির ভাষাটা এরকম, মানু আগর মুনি জিপুত দুগ আছিলা। এর ইংরেজি হলো মেন অফ মেইল চাইল্ড টু ওয়ের। বাংলায় এর প্রতিফলন একজন পুরুষ লোকের দুজন ছেলে। এবার মনিপুরী ভাষা। মি আমাগী মাচা নিপা আনি লাই রাখি। এর অর্থ ও সেই একই। এক পুরুষের দুজন ছেলে। প্রশ্ন হলো দুই গোষ্ঠীর ভাষা তাহলে দুই রকম এটা স্পষ্ট হয়ে গেল। এবার সংস্কৃতির প্রসঙ্গ। এতে ও বিস্তর ফারাক রয়েছে দুই জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে। ফারাকটা কি রকম তা ও জানা থাকা দরকার আপনাদের সবার। মণিপুরীদের আসল ধর্ম হলো সেনামাহি। এই ধর্মের লোকেরা রঙ্গিন ধুতি পরিধান করে আপকপা করে থাকেন। মানে তাদের কাছে ভগবান মানেই তাদের পিতৃপুরুষেরা। পিতৃপুরুষের ব্যবহার কৃত যে কোনো সামগ্রীকেই তারা ভগবান মেনে পুজো দেন। তাদের এই পুজোয় নিবেদন থাকে মাছ। অর্থাৎ যে পিতৃপুরুষ যা আহার করে তৃপ্তি পেতেন তা দিয়েই পুজো হয় তাদের। এখনো মণিপুরের ৫০ শতাংশ লোক এই ধর্মে দীক্ষিত। তবে বিষ্ণুপুরিয়া জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা হিন্দু সনাতনী ধর্মে দীক্ষিত। তাই সনাতনী ধর্মে তো কোনো সময়ই আমিষ বেবরিত হয় না। মণিপুরে বর্তমানে বাকিরা হিন্দু সনাতনী ধর্মেই দীক্ষিত। মণিপুরের রাজা ভাগ্য চন্দ্র দীক্ষিত হয়েছিলেন হিন্দু সনাতনী ধর্মে। এরপরই ধীরে ধীরে এই সনাতনী ধর্মে লোকেদের ভিড় বাড়তে থাকে। তাহলে প্রশ্ন হলো কেন ত্রিপুরায় বিষ্ণুপুরিয়া জাতি গোষ্ঠীর লোকেরা নিজেদের সন্মান পাবে না। শুধু চলছে একটাই কথা, মনিপুরী, বিষ্ণুপ্রিয়া নাহলে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী জাতি গোষ্ঠী। প্রাপ্ত খবর এরকম যে,বিগত দিনে মণিপুর সরকারের তরফে তৎকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তীকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল মনিপুরী শব্দের আগে পিছে কোনো ধরনের শব্দ লাগানো যাবে না।এদিকে ২০১১ সালে ত্রিপুরা সরকারের সেনসাসে ও বিষ্ণুপুরিয়া জাতি গোষ্ঠীর উল্লেখ রয়েছে। যাতে জনসংখ্যা দেখানো হয়েছিলো ৭৯৬৪৬ জন। এই তথ্যও রয়েছে বিষ্ণুপুরিয়া সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের কাছে। তথ্যের সমাহার রয়েছে বিষ্ণুপুরিয়া সারথি সংস্থার কাছে ও। ইতিহাস আরো অনেক রয়েছে এই বিষ্ণুপুরিয়া জাতিগোষ্ঠীর। এগুলো ধীরে ধীরে তোলে ধরা হবে জনসমক্ষে। এই জাতি গোষ্ঠীর একটাই চাওয়া সরকারের কাছে, তাদের যোগ্য স্বীকৃতি দেয়া হোক এই সমাজে। ।ত্রিপুরা সহ মণিপুর, আসামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই বিষ্ণুপুরিয়া জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা। তবে তাদের এখনো পর্যন্ত মিললো না কোনো ধরনের সরকারি স্বীকৃতি। এর ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে বড়ই কষ্ট হচ্ছে। সব জাতির নির্দিষ্ট একটি ইতিহাস রয়েছে। একই ভাবে বিষ্ণুপুরিয়া জাতি গোষ্ঠির ও রয়েছে প্রাচীন কাল থেকেই ইতিহাস। এরপর ও কেন যে এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সরকারি স্বীকৃতি মিললো না তা নিয়েই আফসোস প্রকাশ করলেন বিষ্ণুপুরিয়া জাতি গোষ্ঠীর লোকেরা। একই কথা বললেন ৮৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা। তিনি স্পষ্ট ভাবে বললেন, তারা বিষ্ণুপুরিয়া জাতি গোষ্ঠীর লোক। তারা বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী নন। এখন দেখার বিষয় এই নিয়ে রাজ্য সরকারের কি পদক্ষেপ গৃহীত হয়। একটা জাতি গোষ্ঠীর লোকেদের আবেদন কতটা গ্রাহ্য হয় , এখন তা ই দেখার।
বিষ্ণুপুরিয়া। অপরদিকে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী। দুটো সম্পুর্ন আলাদা জাতি গোষ্ঠী। এমনই দাবি তুললেন বিষ্ণুপুরিয়া জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা। তাদের অভিযোগ, মণিপুরীদের ভাষা এবং সংস্কৃতি সম্পূর্ন আলাদা বিষ্ণুপুরিয়াদের থেকে। এই সংক্রান্ত যাবতীয় সব তথ্য ও নাকি রয়েছে বিষ্ণুপুরিয়াদের কাছে। সেনসাসে তাদের উল্লেখ থাকলে ও এখনো পর্যন্ত ত্রিপুরা রাজ্যে কিন্তু তারা সরকারি ভাবে কোনো স্বীকৃতি পায়নি। যা নিয়েই খুবই চিন্তিত এই জাতি গোষ্ঠীর লোকেরা।