কালের বোধন বাসন্তী পুজোর মঙ্গলবার সপ্তমী। বিভিন্ন মন্দির ও বাড়িতে শ্রদ্ধা ভক্তি সহকারে বাসন্তী রুপি দেবী দুর্গা পূজিতা। ভক্ত সাধারনের মধ্যে উৎসবের আনন্দধারা।
পুরান অনুযায়ী সমাধি নামে এক বৈশ্বর সঙ্গে রাজা সুরথ বসন্তকালে ঋষি মেধসের আশ্রম দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। যা পরবর্তীতে বাসন্তী পূজা নামে প্রসিদ্ধ প্রচলিত হয়। দেবী দুর্গার প্রথম পূজারী হিসাবে চন্ডিতে রাজা সুরথের নাম উল্লেখ রয়েছে। যোদ্ধা হিসেবে রাজা সুরথ ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। একটা সময় কোন যুদ্ধে নাকি তিনি কখনো হারেননি। কিন্তু একবার প্রতিবেশী এক রাজা তাকে আক্রমণ করলে, রাজা সুরথ পরাজিত হন। এই সুযোগে তার সভাসদরা লুটপাট চালায়। তা দেখে হতবাক বিষাদ হয়ে রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে পড়েন এবং ঘুরতে ঘুরতে ঋষি মেধসের আশ্রমে পৌঁছেন। সে আশ্রমেই থাকা শুরু করেন রাজা সুরথ। তবু তার মনে শান্তি নেই। এর মধ্যে রাজার সঙ্গে সমাধি নামে এক বইশ্বের দেখা হয়। রাজা সুরথ জানতে পারেন ওই ব্যক্তিকে তার স্ত্রী পুত্ররা মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে। এর পরও ওই ব্যক্তি তার স্ত্রী সন্তানদের ভালো-মন্দ তখনও ভেবে চলেছেন। উভয়ের মন তখন আরও অশান্ত অস্থির হয়ে ওঠে রাজা সুরথ ও সমাধির মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তাদের মহামায়ার আরাধনা করার উপদেশ দেন ঋষি মেধস। শুরু হয়ে যায় আরাধনা। কঠোর তপস্যা পরবর্তীতে ঋষি মেধসের আশ্রমে বৈশ্য সমাধিকে সঙ্গে নিয়ে চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দেবী দুর্গার পূজা করেন রাজা সুরথ। সেই থেকেই এই পুজোর বাসন্তী পূজা নামে প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ লাভ। আজও সে ধারায় বিভিন্ন মন্দিরে বাড়িতে ও বারোয়ারি পূজো মণ্ডপে বাসন্তী পূজার প্রচলন।
মিল্টন বাসন্তী
সে অনুযায়ী আগরতলার দুর্গা বাড়িতে মঙ্গলবার বাসন্তী রুপী দেবী দুর্গার সপ্তমী পূজা অনুষ্ঠিত। ব্যাপক ভক্ত সমাগমে দুর্গাবাড়ি পুজো মণ্ডপে রীতিমতো উৎসব মুখরতা। জগৎবাসীর মঙ্গলের জন্য রাজন্য আমল থেকে একই ধারায় দুর্গা বাড়িতে বাসন্তীপূজো হয়ে আসছে বলে জানালেন পুরোহিত জয়ন্ত ভট্টাচার্য।
শুধু দুর্গাবাড়িতেই নয়, অন্যান্য মহাকুমাতেও চলছে বাসন্তী পূজা। এরমধ্যে সোনামুরার কাঠালিয়ায় এবার বাসন্তী পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি। এর আগে কাঠালিয়ায় একটিমাত্র বাসন্তী পূজা হতো। এবার তিনটি। সেগুলো হলো উত্তর মহেশপুরের উদয় সংঘ সামাজিক সংস্থা, একই পঞ্চায়েতের পূর্বপাড়ায় এবং কাঠালিয়া দ্বাদশ স্কুল মাঠে আয়োজিত বাসন্তী পুজো।
এই বাসন্তী পুজোকে কালের পুজো, বলে অভিহিত করে পূজা শুরুর পৌরাণিক রাজা সুরথের কথা শোনালেন সংশ্লিষ্ট পুরোহিত।
অন্যদিকে বগারবাসার কালিবাড়ি সংলগ্ন জাগ্রত প্লে সেন্টার এবারও বাসন্তী পূজার আয়োজন করেছে। সোমবার ষষ্ঠীতে জাগ্রত প্লে সেন্টারের বাসন্তী পূজার উদ্বোধন করেন বিধায়ক রাম পদ জমাতিয়া। দ্বিতীয়বারের মতো এই বাসন্তী পূজোর আয়োজন। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হলো সপ্তমী পূজো।
তবে বাসন্তী পূজার প্রচলন ও সূচনা নিয়ে নানা জনের নানামত। একাংশের মতে লঙ্কার রাজা দশানন রাবন বাসন্তী পূজা প্রচলন করেছিলেন। বিতরকের অন্ত নেই। থাকুক সেই বিতর্ক, এরমধ্যেও বাসন্তী পূজাকে ঘিরে ভক্ত প্রাণ সাধারণ বর্তমানে আনন্দে মাতোয়ারা। সে আনন্দধারায় মঙ্গলবার সপ্তমী পূজো অনুষ্ঠিত, বুধবার অষ্টমী, বৃহস্পতিবার নবমী এবং শুক্রবার দশমী তিথিতে শেষ পুজোর পর দেবীর বিদায়ের পালা।