উত্তর জেলার কদমতলা ব্লকের অধীন কুর্তি গ্রাম পঞ্চায়েত।এই গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ মানুষের অর্থনৈতিকভাবে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস। তাই সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দারা ডাল ভাত খেয়ে দিনাপাত করছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস কারি মানুষের জন্য রেগার কাজ একটি অন্যতম সহায়ক প্রকল্প। কিন্তু রেগা প্রকল্পেও উঠে আসছে নানা দুর্নিতির অভিযোগ।
কুর্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সিদ্দেক আলীর অভিযোগ,চলতি অর্থ বছরের তার নামে ষাট ম্যান্ডেজ এর একটি ল্যান্ড লেবেলিং এসেছে বলে জানান গ্রাম প্রধান সুব্রত শব্দকর। প্রধানের কথা মতো তিনি তার আত্মীয় পরিজন নিয়ে চুক্তি অনুযায়ী ষাট ম্যান্ডেজ কাজ করেন।কিন্তু কাজ শেষ হতে না হতেই পঞ্চায়েত থেকে সেই কাজের পাশে সাইনবোর্ড বসানো হয়।
আর সাইনবোর্ডে দুইশো নিরানব্বই ম্যান্ডেজ কাজের লেখা দেখে জায়গার মালিকের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়।পরে প্রধানের সাথে সে ব্যাপারে কথা বললে কোন সদুত্তর পাননি বলে জায়গা মালিক সিদ্দেক আলীর অভিযোগ।ঘটনাটি চাউর হতেই এই কাজের সমস্ত প্রক্রিয়া ডিলিট করে দেওয়া হয় বলে জায়গা মালিক জানান।তিনি আরো বলেন,ঘটনাটি নজরে আসার পর প্রধান ও পঞ্চায়েত কতৃপক্ষ তাকে পঁচিশ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনাটি ধামা চাপাও দিতে চেয়েছিলেন,কিন্তু তিনি পঞ্চায়েত কতৃপক্ষের অন্যায় আবদারকে প্রশ্রয় দেননি।আর তাতে বর্তমানে ষাট ম্যান্ডেজ কাজ করে এখন পর্যন্ত রেগার নায্য মজুরিটুকু পাচ্ছেন না জায়গা মালিক ও তার আত্মীয় পরিজনরা।
তাছাড়া গ্রাম প্রধান সুব্রত শব্দকর রেগার ম্যান্ডেজ দেবেন বলে নিজের বাড়িতে ব্যাক্তিগত কাজ করিয়ে রেগা শ্রমিকদের নায্য মজুরি দেন না বলেও অভিযোগ।গ্রাম প্রধানের লাগামহীন দূর্নীতিতে সরব হয়েছেন স্হানীয় জনগণও। স্হানীয় জনগণ অভিযোগ করে বলেন,গ্রাম প্রধান সুব্রত শব্দকর রেগা শ্রমিকদের ন্যায্য সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।স্হানীয়রা অভিযোগ করে আরো বলেন, কুর্তি গ্রাম পঞ্চায়েতে দূর্নীতি শুধু সিদ্দেক আলীর ল্যান্ড লেবেলিং এ হয়েছে তা নয়।এরকম ভুরিভুরি দুর্নীতি গোটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রয়েছে। চলতি অর্থবছরের ছয় নং ওয়ার্ডের “ইছন মিয়ার নালা” নামের অয়ার্ক ওর্ডারে রেগা শ্রমিকরা আনুমানিক পাঁচশো ম্যান্ডেজের কাজ করলেও কাগজে কলমে উনিশশো তেষট্টি ম্যান্ডেজ খরচ হয়ে গেছে। পাশাপাশি দুই নং ওয়ার্ডের ল্যান্ড লেবেলিং অফ একালছ আলী এই প্রজেক্টে আর্থিক নয়ছয় হয়েছে বলেও স্হানীয়রা অভিযোগ করেন।
স্হানীয়দের দাবি সংশ্লিষ্ট দপ্তর কুর্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাহাড় সমান দূর্নীতির সুষ্ট তদন্ত ক্রমে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।সাথে রেগা শ্রমিকদের ন্যায্য কাজ ও মজুরি দেওয়া হোক। অন্যথায় স্হানীয় জনগণ গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হবেন।এদিকে এই ঘটনা নিয়ে গ্রাম প্রধান সুব্রত শব্দকরের সাথে কথা বলতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে টেলিফোনিক সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে সংবাদ মাধ্যমের হাত থেকে বাঁচতে মোবাইল সুইচ অফ করে দেন। গোটা ঘটনা নিয়ে জি আর এস নুর আলম বলেন,উনারা শ্রমিকদের কাছ থেকে ডিমান্ড এন্ট্রি পাওয়ার পর কাজ শুরু করান।আর বিতর্কিত সিদ্দেক আলীর ল্যান্ড লেবেলিং এর শুধু ইস্টিমিট ও ওয়ার্ক ওর্ডার ইস্যু হয়েছে। শ্রমিকরা কাজের জন্য কোন ডিমান্ড এন্ট্রি করেননি। সুতরাং কে বা কারা কাজ করেছেন তা তাঁর অজানা।তবে পঞ্চায়েত কতৃপক্ষের কথা অনুযায়ী কাজের ইস্টিমিট ও ওয়ার্ক ওর্ডার ইস্যু হল, কিন্তু ডিমান্ড এন্ট্রি ছাড়াই কিভাবে কাজ শুরু হবার আগেই কাজের সাইডে সাইনবোর্ড বসানো হলো তা নিয়ে দেখা দিয়েছে হাজারো প্রশ্ন।