হিন্দু সমাজের ঐতিহ্যানুযায়ী চৈত্র মাস হল শিব-পার্বতীর বিবাহের মাস। এই মাসেই তাই গাজনের ধুম। গাজনের শেষ দিনের অনুষ্ঠান চড়ক। চড়ক হিন্দুদের উৎসব।শুধু শিব নন, গাজন হয় মনসা কিংবা বীর বলাইকে নিয়েও। উৎসবে মিলেমিশে যান লৌকিক দেবদেবী,আসে বৌদ্ধ প্রভাব। থাকে নানা বিস্ময়কর প্রথা।
আমরা দুটি ভাই শিবের গাজন গাই,
ঠাকুমা গেছে গয়া কাশি ডুগডুগি বাজাই।
এখনও ছোট বেলার এই ছড়া চৈত্র মাসে সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক।এই সময়ে সন্ন্যাসীদের হাঁক মনে করিয়ে দেয় গাজন উৎসবের কথা।বিশেষ করে গ্রামের ধর্ম প্রাণ শিব ভক্তরা এই ডট কমের যুগে আজও ধরে রেখেছে ধর্মীয় পরম্পরা।
কৈলাসহর পুরপরিষদের অধীন দক্ষিন কাচরঘাটের মোহনপুর বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় প্রতিবারের ন্যায় এবারও চৈত্র সংক্রান্তির দিন অনুষ্ঠিত হবে মহকুমার ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলা। দিনের বেলার পাশাপাশি রাত্রিতেও চড়ক পূজার ভক্তরা যাচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। শিব গৌরীর নৃত্যের পাশাপাশি সাথে থাকছে কালি ও অশুর নৃত্য। বুধবার রাতে কৈলাসহর PWD রোড ও মধ্যপাড়া এলাকায় রাতে দেখা মিলল দক্ষিন কাচরঘাটের মোহনপুর বাঁধ সংলগ্ন এলাকার চড়ক পূজা কমিটির ভক্তদের। তাদের গান ও নৃত্য দেখতে এলাকার বাসিন্দা ছোট থেকে বড় প্রত্যেকেরই উৎসাহ ও কৌতুহল ছিল লক্ষণীয়।
বৃহস্পতিবার রাত বারোটার পর অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী কালি নৃত্য, সংক্রান্তি দিন অর্থাৎ শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। দক্ষিণ কাজরঘাটের এই ঐতিহ্যবাহী চরক মেলা মূলত প্রতি পছর জন প্লাবনের পরিণত হয়। যদিও কোভিড মহামারীর কারণে বিগত কয়েক বছর মূলত সে ধরনের কোন উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব না হলেও এবছর তা বিশেষ মাত্রা পাবে বলে জানায় কমিটির লোকেরা।
চড়ক উৎসব শেষে হলে তারা কি করেন,এই প্রশ্নের উত্তরে আয়োজক কমিটির লোকরা জানায়,তখন যার যার কাজে চলে যায়।তবে উৎসবের দিনগুলিতে এক সাথেই থাকেন।
চড়ক পূজা নিয়ে অনেক মতানৈক্য আছে, লিঙ্গপুরাণ, বৃহদ্ধর্মপুরাণ এবং ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে চৈত্র মাসে শিবের আরাধনা এবং উৎসবের উল্লেখ থাকলেও চড়ক পূজার উল্লেখ নেই। তবে পাশুপত সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকালে এই উৎসব প্রচলিত ছিল। চড়ক পুজো কবে কী ভাবে শুরু হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস জানা যায় না। তবে প্রচলিত রয়েছে, ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পুজোর প্রচলন করেন বলে জানা যায়। রাজ পরিবারের লোকজন এই পুজো আরম্ভ করলেও চড়কপুজো কখনও রাজ-রাজড়াদের পুজো ছিল না।এটি ছিল হিন্দু সমাজের লোকসংস্কৃতি।আর এই লোকসংস্কৃতিই ভারতকে পৃথিবীর মধ্যে সংস্কৃতির সেরা পীঠস্থানের আসনে বসিয়েছে।