শিক্ষা দপ্তরের প্রশ্নপত্র ফাঁস। সুযোগ বুঝে বানিজ্য করলেন প্রাইভেট শিক্ষক। সঙ্গে নাম ও খ্যাতি অর্জন করলেন তিনি। কিভাবে শিক্ষা দপ্তর থেকে প্রশ্নপত্র আসল প্রাইভেট শিক্ষকের হাতে? এর পেছনে কি রয়েছে মোটা অঙ্কের লেনদেন? নয়ত কিভাবে প্রাইভেট শিক্ষকের হাতে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র গেল? এনিয়ে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে সেকেন্ডারি এডুকেশনের স্বচ্ছতা নিয়েও।
৩০ মার্চ রাজ্যের সরকারি এবং সরকার অধিগৃহীত স্কুল গুলিতে একাদশ শ্রেণীর ফিজিক্স এর পরীক্ষা হয়েছে। সেই পরীক্ষা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার পর দেখা গেল রাজধানীর রামনগরের এইচ ডি ফিজিক্স এর শিক্ষক ইঞ্জিনিয়ার দীপেন বাবুর সাজেশনের সঙ্গে সরকারি স্কুলের ফিজিক্স পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র হুবহু মিলে রয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষক তার সাজেশানে ছাত্র ছাত্রীদের যে সব প্রশ্ন দিয়েছেন তার প্রায় সবকটিই শিক্ষা দপ্তরের প্রশ্নে রয়েছে। তাতে করে সেই শিক্ষকের সমস্ত ছাত্রছাত্রী একশ নম্বরের মধ্যে একশ নম্বরই হয়ত পেয়ে যাবে। কিন্তু যে সব ছাত্র ছাত্রী এই প্রাইভেট শিক্ষকের সাজেশান পায়নি তারা কিন্তু সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হল।
এইক্ষেত্রে প্রাইভেট শিক্ষক দীপেন বাবুর হয়ত কোন দোষ নেই। তিনি সাজেশন পেয়েছেন তাই তার ছাত্রছাত্রীদের দিয়েছেন। তার কোচিং এর ছাত্র ছাত্রীরা সুযোগে বেশি নম্বর পাবার সুযোগ পেয়েছে। তাতে করে প্রাইভেট শিক্ষক নিজের নাম, খ্যাতি অনেকাংশেই বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে তাদের অভিভাবকদের অনেকটাই খুশি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।কারণ তিনি সুযোগ পেয়েছেন আর সেই সুযোগের সদ্যবহার করলেন। কিন্তু প্রশ্নপত্র তৈরির জন্য শিক্ষা দপ্তর থেকে একটি টীম গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে এবং সেই প্রশ্ন থেকে বাছাই করে একটি ফাইনাল প্রশ্ন পত্র তৈরি করা হয়েছে।একটি প্রশ্নের জন্য দুই বা তার বেশি শিক্ষকের কাছ থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে কমিটি। কিন্তু সেই কমিটির কোন সদস্য বা সদস্যা যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস না করেন তাহলে প্রাইভেট শিক্ষক দীপেন বাবুর কাছে কিভাবে সেই প্রশ্ন গেল? এর পেছনে কি মোটা অংকের অর্থের লেনদেন রয়েছে? দীপেন বাবু সরকারী কোন স্কুলে শিক্ষকতা করেন না। তাই শিক্ষা দপ্তর তার কাছ থেকে নিশ্চিত প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেনি। তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট শিক্ষা দপ্তরের প্রশ্নপত্র কমিটির কেউ মোটা অঙ্কের বিনিময়ে প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে সেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। অর্থাৎ প্রাইভেট শিক্ষক দীপেন বাবুর সঙ্গে প্রশ্নপত্র কমিটির একটা সুন্দর লিংক রয়েছে। আর বিনা পয়সায় কেউ তুলাও বহন করেনা তাও সবার জানা। অর্থাৎ প্রশ্ন পত্র ফাঁসের সঙ্গে মোটা অংকের লেন দেন অবশ্যই রয়েছে। দীপেন বাবু যেহেতু প্রাইভেট টিউশন করছেন তার বিনিময়ে তিনি ছাত্র ছাত্রিদের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছেন। কোচিং সেন্টারে যত বেশি ছাত্র ছাত্রীদের ভিড় হবে তত বেশি প্রাইভেট শিক্ষকের ব্যবসা বারবে। দীপেন বাবু তার ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধির জন্যই হয়ত মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে প্রশ্নপত্র ক্রয় করেছেন। এটা তার ব্যবসার পলিসি।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে নিউজ ভ্যানগার্ডের প্রতিনিধি হায়ার এডুকেশনের অধিকর্তা এন সি শর্মাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে শুনেছেন। কিভাবে প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে প্রশ্নপত্র গেল ঘটনার তদন্ত করে এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে দপ্তর। কে বা কারা এই ঘটনার পেছনে যুক্ত তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
সরকার রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের গুনগত শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছে। এই লক্ষ্যেই স্কুল গুলিতে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। শতাধিক স্কুলে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ত্রিপুরাকে দেশের শীর্ষে নিয়ে যেতে কাজ করছে সরকার। কিন্তু একাংশ শিক্ষক শিক্ষা দপ্তরকে কালিমা লিপ্ত করছে। তাদের জন্যই স্কুল গুলিতে গুন গ ত শিক্ষা দান করতে বারবার বাধার সৃষ্টি হচ্ছেন দপ্তরের আধিকারিকরা। অর্থাৎ এই কাজে সফলতা আসছেনা। যার দৃষ্টান্ত হচ্ছে একাদশ শ্রেনীর ফিজিক্স পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস। তবে এই বিষয়ে হায়ার এডুকেশনের অধিকর্তা কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেটাই দেখার।