এরই নাম হয়তো জীবন!!!! একই ঘরে দু জন দিব্যাঙ্গ। ছেলে ও স্ত্রী। বৃদ্ধ মা। খিদে তো লাগে সবারই। তাই এদের মুখে অন্নের জোগাড় করতে সেই প্রতিদিন ভোর বেলা থেকে বেরিয়ে পড়েন ভাঙা একটা সাইকেল নিয়ে স্বপন বাবু। কাপড় লাগবো নি কাপড়, এই আওয়াজটাই তার সংসারের মুখে দুমুঠো অন্নের অন্যতম সংযোজন। হোক প্রখর শীত,কিংবা কাঠ ফাটা গরম,কিংবা অঝোরে বৃষ্টি, ক্লান্তির যে অবকাশ নেই স্বপন বাবুর কাছে। বিভিন্ন গলির মুখে দাঁড়িয়ে,দাঁড়িয়ে তিনি সেই যে অবিরাম আওয়াজ দিয়েই চলেন কাপড় লাগবো নি কাপড়। বিক্রি হলেই জ্বলবে তার ঘরের উনুন, না হলে তো সেই আধপেটা অবস্থাতেই দিন গুজরান। ছেলে শাহীন জন্মলগ্ন থেকেই ষাট শতাংশ দিবাঙ। ঠিক ভাবে হাঁটা চলা ও করতে পারে না সে। তবে এরপর ও মনের অদম্য সাহস এবং ইচ্ছে শক্তির উপর ভর করেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে তৎপর নির্ভীক এই ছেলে। ছেলেটির এমবিএনস। মোহনপুর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীর ছাত্র সে। বড়ই অভাবের সংসার তো। তাই বাবার কাছে মুখ ফুটে বলার যে তার সাহস ও নেই, পড়াশোনার জন্য একটা মোবাইল কিনে দিতে। বাবার কষ্ট তো তার চোখে দেখা। নুন আনতেই বেজায় কষ্ট হয় স্বপন বাবুর, মোবাইল তো অনেক দূরের কথা।
কিন্তু বর্তমানে মোবাইল যে খুবই আবশ্যক হয়ে পড়েছে পড়ুয়াদের জন্য। এখন আপাতত অফলাইনে ক্লাস হচ্ছে সব স্কুলেই। তবে কোভিড সিচুয়েশনে সব স্কুলেই অন ল্যাইনে ক্লাস হয়েছিল। সাহীনের তো কপাল ই মন্দ। অন লাইনে সে ক্লাস করবে কিভাবে। মোবাইল ই তো তার নেই। আর এখন তো অফ লাইনে চলছে ক্লাস। এতে ও যে অপারগ শাহীন। হাটতেই তো কষ্ট তার। স্কুলে যাবে কিভাবে সে রোজদিন। এই তো গেল বাবা ও ছেলের করুন কাহিনী। এবার গা শিউরে উঠার আরেক অধ্যায়। সাহিনের মা ও দিবাঙ। তার অবস্থা তো আর ও বেশি বেদনাদায়ক। তিনি এতটাই অসহায় যে, দাঁড়াতেই পারেন না। মাটিতে লুটিয়ে, লুটিয়েই তার জীবন। এক কথায় সাপের মতোই তিনি প্রতিদিন দিনাতিপাত করছেন। মাটির সঙ্গেই তার একাত্মতা। রান্না বান্না থেকে শুরু করে সব ই তিনি মাটিতে লুটিয়ে,লুটিয়ে করে চলেছেন। এমবিএনস তার মার।।। কষ্টের পরিমাপটা যে এতটাই বেদনা দায়ক হতে পারে, এই দৃশ্যগুলো যেন তারই জানান দিলো। অভাব,অনটন আর কষ্টের এহেন দোলাচল, সত্যি ই পাথরকেও হয়তো ভেঙে খান,খান করে দেবার উপক্রম। ভগবান আদতেই কি আছেন, না কি, এই একটা প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক। একই পরিবারের মা ও ছেলের এমন করুন দশা, এরপর ও কিন্তু হাল ছাড়েন নি এই পরিবারের কর্তা স্বপন বাবু।
রোজ তিনি নিয়ম করেই বেরিয়ে পড়েন কাপড় বিক্রি করতে। এছাড়া যে কোনো উপায় ও নেই তার কাছে। না হলে যে ভাত জুটবে না পরিবারের কারোর মুখেই। মোহনপুর পুর পরিষদের দশ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হলেন এই স্বপন সাহা। স্ত্রীর দিবাঙ ভাতা রয়েছে,তবে এখনো কিন্তু ছেলে সাহিনের এই ভাতাটা কপালে জুটলো না। রেশন কার্ড ও এপিএল এর তালিকাভুক্ত। এই পরিস্থিতিতেই দিন গুজরান করে চলেছে অসহায় এই পরিবার। শাহীনকে নিয়ে আফসোস প্রকাশ করলেন তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও।
শাহীন কোনো দিশে না পেয়ে অবশেষে একটি মোবাইল ফোনের জন্য অনুরোধ জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তবে এই অনুরোধটা ও এখনো বিশ বাও জলের নিচেই। কেন না এই বিষয়ে শিক্ষা দপ্তরের চূড়ান্ত হেলামির নিদর্শন রয়েছে। আবেদন করে ও অপেক্ষাতেই দিন কাটিয়ে চলেছে এই দিবাঙ শাহীন। মিলবে তো সাহীনের মোবাইল। পড়তে পারবে তো সে আগামী দিনে ভালো ভাবে। না কি সেই দারিদ্র্যের করাল গ্রাসে হারিয়ে যাবে উজ্জ্বল এক প্রতিভা। এরই অপেক্ষা এখন শুধুই!!!
BlackHat
January 22, 2022 at 11:23 pm
https://blackhatseo.win/ amazing bhseo webpage